Other

বউকে কিভাবে বশ করা যায়? স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

দাম্পত্য জীবণে সুখী হতে স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে বউকে কিভাবে বশ করা যায়, সেবিষয়ে ইসলামিক বার্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেছি।

জৈনিক ব্যক্তি তার পারিবারিক দাম্পত্য জীবণে অসুখী হওয়ার ফলে, আমাকে প্রশ্ন করেছে যে: বউকে কিভাবে বশ করা যায়? হয়তোবা আপনিও এই সমস্যায় ভুগছেন! আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার বনিবনা না থাকলে, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে মনোযোগের সাথে চোঁখ ফেলেন। আশা করি, সাংসারিক জীবণকে সুখী করার জন্য কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

প্রশ্নঃ

 আমি বিয়ে করেছি বিয়ের পর আমার একটি সন্তানও হয়েছে। কিন্তু এখন এই সন্তান বড় হয়েছে। আমার স্ত্রীর সাথে আসলে কোন বনিবনা হচ্ছে না। কারণ তাকে ইসলামের পথে আনার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করছি এবং তাকে বোঝাবারও চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনভাবেই আমি তাকে ইসলামের বিধি-বিধান যেমন নামাজ রোজা এগুলো তাকে করাতে পারছি না। এমত অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে আমি কিভাবে এই জিনিসটি সমাধানে নিয়ে আসতে পারি?

উত্তরঃ

 প্রশ্নের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম যে স্ত্রীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে স্বামী চাচ্ছে স্ত্রী নামাজী হোক আর স্ত্রী কোরআন পড়ুক সুন্নাহ পড়ুক। এবং ইসলামী একটি লাইফ লিড করুক। কিন্তু স্ত্রী হয়তো স্বামীর সেই আবেদনে সাড়া দিচ্ছেনা।

 এই প্রশ্নগুলো খুব কমন একটি প্রশ্ন এবং দাম্পত্য জীবনে অনেকের মধ্যেই এটা হয়ে থাকে। এমনকি এরকম পরিস্থিতিতে স্ত্রীর অনেক আচরণে খুব অসন্তুষ্ট হয়ে স্বামী ডিভোর্সের ডিসিশন নেয়।

আমাদের দেশে এ ডিভোর্সের রেটটাও খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে। রাগের মাথায় ডিভোর্স দিয়ে দেয়। কিন্তু ইসলাম আসলে হুট করে, ইনস্ট্যান্ট ডিভোর্স দেওয়াকে অনুৎসাহিত করে।

পৃথিবীতে যত হালাল জিনিস আছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল জিনিস হচ্ছেঃ তালাক বা ডিভোর্স দেয়া।

বউকে কিভাবে বশ করা যায়?

 ডিভোর্স দেয়াটা হারাম নয়, এটা হালাল। তবে একেবারে অপারগ হলে তো এই ক্ষেত্রে যেটা করবেনঃ যতটুকু সম্ভব সঙ্গীনিকে টিউনিং করতে হবে। স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে, কাউন্সিলিং করতে হবে।

সুতরাং যতটুকু সম্ভব হয় তাকে সর্বোচ্চ বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। নিজে না পারলে যার প্রতি তার ওয়াইফ দুর্বল, যার যাকে বেশি রেসপেক্ট করে, শ্রদ্ধা করে। তাকে দিয়ে নানা ভাবে ছলে বলে কৌশলে তাকে কোরআনের পথে ইসলামের জীবণ যাপনে আনতে হবে।

তবে কোনভাবেই যদি তার সাথে বনিবনা না হয়। সেক্ষেত্রে সেপারেশনে যদি কেউ যেতে চায়, সেক্ষেত্রেও কিন্তু ইসলাম আমাদেরকে সুন্দর দিক নির্দেশনা দিয়েছে।

 তার একটি সন্তানে রয়েছে।  সেটা চিন্তা করার বিষয় ইসলাম প্রথমে যেটা সাজেস্ট করে, যে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং না হলে। আপনার স্ত্রীকে নাসিহত করবেন। তাকে বুঝাবেন।

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

 যেটা আপনি বললেনঃ কাউন্সিলিং এটা শুধু বসে উপদেশ দেওয়া নয়। বরং হতে পারে তাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। আওটিং করতে যাওয়া। এতে কিন্তু অনেক সময় রিলেশনশিপ অনেক ভালো হয়। মানে বোঝাপড়াটা আরো ভালো হয়। ভুল বোঝাবুঝি থাকলে এগুলো ঠিক হয়ে যায় সাধারণত।

 কাউন্সেলিং এও যদি কাজ না হয়, তারপরে ইসলাম বললঃ সরাসরি কোরআনের আয়াত যে তার সাথে বিছানা পৃথক করে দাও। সে থাকবে এক রুমে তুমি থাকবে আরেক রুমে। কারণ, অনেক সময় বিচ্ছেদেও কিন্তু ভালোবাসা বাড়ে।

 বিচ্ছেদ তৈরি হলে তার মধ্যে হয়তো একটা আত্ম-উপলব্ধি হতে পারে। এটা ফিলিংস তৈরি হবে যে আমাদের একটি সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিনের সংসার কত মধুময় স্মৃতি। তখন হয়তো সে আবার ব্যাক করতে পারে।

স্ত্রী অবাধ্য হলে কি করবেন?

 দ্বিতীয় স্টেপেও যদি কাজ না হয়। তখন ইসলাম বলেছেঃ তাকে একটু শাসন করো। এখানে আর দুররা বা শাষণ বলতে অনেকে সরাসরি মারার অর্থ নেই। কিন্তু বিশ্বনবী সা. কখনো তার স্ত্রীদেরকে মারেন নাই। তিনি কখনও স্ত্রীদের প্রতি গায়ে হাত তুলেন নি।

এজন্য এখানে আসলে অর্থটা করতে হবে যে, তাদের সাথে একটু রূঢ় আচরণ কর। যাতে করে, মেজাজ কড়া হয়। সহজ কথায়ঃ যেহেতু নরমভাবে কাজ হচ্ছে না। এখন একটু শক্ত আচরণ কর, তাকে শক্তভাবে বুঝানোর চেষ্টা করো।

 তাতেও যদি কাজ না হয়। তখন ইসলাম বলেছে তোমার পক্ষ থেকে সালিশ নিযুক্ত করো। মানে তোমার মুরুব্বী যারা অভিভাবকআছে, তারা মেয়ের পক্ষের গার্ডিয়ানদের সাথে বসে মিটিং করে, সংলাপ সমঝোতা করে, তারাও মিলিয়ে দিতে চাইবে। মিউচুয়াল কম্প্রোমাইজের দিকে যেতে চাইবে।

তারপরও ওইটাতেও যদি কাজ না হয়। চারটা স্টেপে যখন আপনি ফেল করলেন। পঞ্চম স্টেপ হচ্ছে তাকে আপনি ডিভোর্স দিবেন।

 সেটাও কিন্তু আপনি একসাথে আমরা রাগের মাথায় তিন তালাক, বাইন তালাক এগুলো বলে ফেলি। আসলে ইসলাম কিন্তু এটা সাজেস্ট করে না।

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প

বউকে কিভাবে বশ করা যায় স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
বউকে কিভাবে বশ করা যায়? স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা।

ডিভোর্সের ব্যপারে ইসলাম বলেছেঃ যে প্রথমে তুমি একটা তালাক দিবে। যখন তোমার স্ত্রী পবিত্র আছে অর্থাৎ মাসিক হয়। তখন না সে যখন ক্লিন; তখন তাকে একটা তালাক দিবে। দ্বিতীয় মাসে আবার যখন ক্লিন, দ্বিতীয় তালাক দেবে। তাহলে লম্বা সময়ের মধ্যে হয়তো নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়ে যেতে পারে।

 তখন স্ত্রীকে নিয়ে আসা যাবে তাতেও যদি কাজ না হয়। তৃতীয় মাসে সে যখন ক্লিন তখন তৃতীয় তালাক দিবে। এভাবে একটা দুইটা তিনটা তালাক যখন দিয়ে দেয়া হয় আসলে খুব কঠিন।

কারণ, যার সাথে এত লম্বা সময় আমি কিভাবে কাটাবো! তখন আপনাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা রাগের মাথায় যে একসাথে তিন তালাক দিয়ে দিয়ে দেই। এটা উচিত নয়।

 আপনি খেয়াল করে দেখেন ইসলাম পাচটা স্টেপ আমাদেরকে প্রেসক্রাইব করেছে। আপনি ধাপে ধাপে যদি এগুতে থাকেন। দেখা যাবে এক নম্বর দুই নাম্বার স্টেপে আপনাদের মধ্যে মিল মিস হয়ে যাচ্ছে।

ডিভোর্সের ইসলামিক গল্প

 একবার ওমরের ফারুক (রা.) যখন মদিনার খালিফা ছিলেন। তখন তো একজন স্ত্রী লোক এসে আমিরুল মুমিনের কাছে বললেনঃ আমার স্বামী তো আমাকে ১০০ তালাক দিয়েছে। এটার বিচার কি হবে?

 তো উমর (রা.) বললেন তোমার স্বামীকে ডাকো। তার হাসবেন্ড আসার পরে উনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কয় তালাক দিয়েছো স্বামী বলে 100 তালাক দিয়েছি।

উমর রাঃ ১০০ তালাক দিলে কেন? তুমি তো দিবে তিন তালাক!

স্বামীঃ তো সে বলল আমার মেজাজ খুব গরম ছিল। রাগের মাথায় আমি একসাথে ১০০ তালাক দিয়েছি।

উমর রাঃ হযরত উমরে ফারুক খুব রেগে গেলেন, এবং বললেনঃ তালাক হচ্ছে আল্লাহর একটা নিদর্শন। আল্লাহর দেয়া আহকাম। তুমি এটা নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছ! তোমার বিচার হচ্ছে আমার ডিসিশন হচ্ছে যে তিন তালাকে তোমার ওয়াইফ তালাক। বাকি 97 তালাক তোমার পিঠের উপরে পড়বে।

 তো তিন তালাকে উনি ডিভোর্স করে দিলেন আর বাকি ৯৭ টি তালাকের বদলা হিসেবে, তাকে বেত্রাঘাত দেয়া হলো।

সুতরাং, তালাক বিষয়টাকে কেউ ছিনিমিনি খেয়ালিপনা ভাববেন নাহ। যাহোক, আশা করি, ইসলামিক আলোকে বউকে কিভাবে বশ করা যায়, সেবিষয়ে ধারণা পেয়েছেন। আপনার দাম্পত্য জীবণ আরও মধুর হোক, সেই কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button